মোবাইল ব্যাংকিং |
ইন্টারনেট এর অগ্রগতির ফলে বিভিন্ন সেক্টরে যেমন বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ব্যাংকিং সেক্টরেও প্রযুক্তি সংযোজন হয়েছে। সেই প্রযুক্তি উন্নতির ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি একটি সহজ ব্যাংকিং সিস্টেম যা “মোবাইল ব্যাংকিং” নামে বর্তমান সময়ে সকলের নিকট পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে “মোবাইল ব্যাংকিং” সেবার এক দশক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।
সময়ের পরিক্রমায় “মোবাইল ব্যাংকিং” জনমনে যথেষ্ট আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। যা বর্তমানে অসংখ্য সাধারন মানুষ এই সেবার সাথে যুক্ত হওয়ার অগ্রগতির তথ্য থেকে জানা যায়। দৈনন্দিন অথবা জরুরী প্রয়োজনের অনেক কাজের পাশাপাশি অনেক যুবকের কর্মসংস্থান হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে এই মোবাইল ব্যাংকিং। আজকের পর্বে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
মোবাইল ব্যাংকিং কি |
মোবাইল ব্যাংকিং কি?
মোবাইল ব্যাংকিং হলো মোবাইলের সাহায্যে ব্যাংকিং বা আর্থিক লেনদেন করতে পারার একটি সুবিধা। যার মাধ্যমে গ্রাহক মোবাইলের সাহায্যে দৈনিক লেনদেন এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা ভোগ করার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বিভিন্ন কোম্পানী তাদের মোবাইল ব্যাংকিং এর আওতায় বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। তবে যে সকল সেবা প্রায় সকল কোম্পানী দিয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মোবাইল রিচার্জ করা, টাকা পাঠানো, টাকা উত্তোলন, বৈদেশিক রেমিট্যান্স গ্রহন, ইউটিলিটি বিল প্রদান ইত্যাদি। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলো সাধারনত কোন একটি বড় ব্যাংক এর অধীনে থাকে। এসএমএস ও মোবাইল অ্যাপ দু’টি প্রক্রিয়াতেই তারা এ সকল সেবা প্রদান করে থাকে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস যথেষ্ট পুরোনো। যদিও প্রথম দিকের সময়ের সাথে বর্তমান সময়ের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আকাশ-পাতাল ব্যবধান। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস জানার জন্য আমাদের ৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে যেতে হবে, যখন ইন্টারনেট সবেমাত্র জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সর্বপ্রথম নিয়ে আসে ইউরোপীয় ব্যাংক গুলো। এর মধ্যে জার্মানি ও নরওয়েকে মোবাইল ব্যাংকিং এর পথিকৃত হিসেবে গন্য করা যায়। জার্মানিতে পেইবক্স (PayBox) নামক ইউরোপীয় কোম্পানি ডয়চে ব্যাংক (Deutsche Bank) কর্তৃক 1999 সালে মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করে এবং একই বছরে নরওয়ের ফোকাস নেটব্যাঙ্ক WAP ব্যাংক সেবা চালু করে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র একাউন্ট এর ব্যালেন্স এবং তার পূর্ববর্তী তথ্য জানার সেবা পাওয়া যেত। যা মূলত এসএমএস বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। তাই এটি এসএমএস ব্যাংকিং নামেও পরিচিত হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মানও বাড়তে থাকে এবং এটি এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
মোবাইল ব্যাংকিং এ পেমেন্ট সিস্টেমটি সর্বপ্রথম ফিলিপাইনে 2001 সালে প্রকাশিত হয়েছিল, যখন দুটি অপারেটর, গ্লোব এবং স্মার্ট, তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি পেমেন্ট প্রদান সিস্টেম চালু করে। ২০০২ সালে, এসকে টেলিকম (SK Telecom) এবং কেটিএফ (KTF) দক্ষিণ কোরিয়ায় ইনফ্রারেড প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছিল। তবে বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রোগ্রামগুলি সফল হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে, এলজি (LG) টেলিকম দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম আইসি চিপভিত্তিক (IC Chip) মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা শুরু করে, যা এলজি টেলিকমের মার্কেট শেয়ার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। এলজি টেলিকমের সাফল্যের পর অন্যান্য ক্যারিয়াররাও আইসি চিপ গ্রহণ করে। অপরদিকে জাপানে ২০০৪ সালে NTT DoCoMo ফেলিকার আইসি চিপ ব্যবহার শুরু করলে তা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ২০০৬-২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের Wachovia ব্যাংক প্রথম আইসি চিপভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং শুরু করে। তারা মাত্র ৬ মাসের মাথায় প্রায় ৫ লক্ষ গ্রাহক অর্জন করেছে। এসএমএস ব্যাংকিং ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ছিল। পরবর্তীতে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের সাথে স্মার্টফোনের উত্থান মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের তৈরী হয়, যা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দেয়। যদিও সে সকল অ্যাপ এর কার্যক্রম ছিল খুবই সীমিত। তারপরও সেখান থেকে এক যুগ সময় পাড়ি দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা অনেক দূর এগিয়েছে।
আরো পড়ুন...
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলার নিয়ম
উপায় মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং
২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (MFS) চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি ব্যাংক ডাচ-বাংলার মাধ্যমে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান চালু করে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র বাংলালিংক ও সিটিসেল এ দুটি সিম অপারেটর এর সাহায্যে এই সেবা প্রদান করা হত। যা বাংলাদেশ ব্যাংক এর তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান স্বয়ং নিজে উদ্বোধন করেন। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিঃ এর মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রথম লেনদেনও ছিল আতিউর রহমানের জমা এবং উত্তোলন বাবদ যথাক্রমে ২০০০ টাকা ও ১৫০০ টাকা। এ দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাদের এ উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছে বর্তমান মোবাইল ব্যাংকিং এর অবস্থান দেখে বুঝা যায়।
প্রথমে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড তাদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেট চালু করে ২০১১ সালে। এর পরপরই ২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গ সংগঠন হিসাবে দ্বিতীয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হিসাবে বিকাশ ( BKASH ) চলে আসে, যার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারী এখন ৫ কোটির বেশি। বর্তমানে ( ২০২১ ) দেশের সর্বত্র শহর, নগর, গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় বিকাশ সেবা পাওয়া যায়। তারপর আরও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত হয়। এদের মধ্যে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ চালু হয় ২০১৯ সালে। তবে নগদ এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবা তুলনামূলক নতুন হলেও বিকাশ এর চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতিতে ৪ কোটি গ্রাহক অর্জন করেছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের সময় এক দশক পেরিয়ে আজকের এ দিনে দেশের প্রায় সর্বত্র মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সমূহের এজেন্ট পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সমূহ
বাংলাদেশে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত ১৫টি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এর সেবা নগদ সহ মোট ১৬ টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যদিও এর মধ্যে অধিকাংশই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এদেশে এমএফএস এর মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হয় প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে, এরপরই আছে রকেটের নাম। তাদের প্রায় ২২ শতাংশ। বাকি ৮ শতাংশ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। এই অংশে আমরা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করব।
Rocket Mobile Banking |
১. রকেট (Rocket)
এটি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। এই ব্যাংকটির মাধ্যমেই দেশের প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছিল। তারা এ সার্ভিসটি চালু করে ২০১১ সালের মে মাসে। প্রথমে এটির নাম ছিল ডাচ-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং। পরবর্তীতে তারা নাম পরিবর্তন করে ‘রকেট’ নামে ব্রান্ডিং শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে সর্ববৃহৎ হতে না পারলেও প্রায় ২ কোটি গ্রাহক সংখ্যা নিয়ে এখনও প্রথম সারির অন্যতম হিসেবে অবস্থান করছে এটি। রকেট ডায়াল কোড *322#।
রকেট (Rocket) ক্যাশ আউট চার্জ:
অ্যাপ ও ইউএসএসডি কোড এর মাধ্যমে – প্রতি ১ হাজারে ১৮.০০ টাকা
এটিএম এর মাধ্যমে – প্রতি ১ হাজারে ৯ .০০ টাকা
bKash Mobile Banking |
২. বিকাশ (bKash)
বিকাশ ব্রাক ব্যাংক লিমিটেডের মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম। এটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে চালু করা হয়। রকেট চালুর দু’মাসের মাথায় বিকাশ Mobile Banking সিস্টেম চালু হয়। এখন পর্যন্ত তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সহজ করে দেওয়ার কারনে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাতে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। সেবার দিক দিয়ে বিকাশ নিশ্চন্দেহে তার যেকোন প্রতিযোগীর চেয়ে এগিয়ে আছে। তাই দেশের অনেক মানুষের কাছে এখনও মোবাইল ব্যাংকিং মানেই বিকাশ। যদিও লেনদেন খরচ বেশী হওয়ার কারনে বর্তমানে এ জনপ্রিয়তার কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। তবে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে সাধারন লেনদেন ছাড়াও রেমিট্যান্স লেনদেন, মূল ব্যাংক হিসাবের সাথে লেনদেন করা যায় সহজেই। বিকাশ ডায়াল কোড *247#।
বিকাশ (bKash) ক্যাশ আউট চার্জ:
ইউএসএসডি কোড এর মাধ্যমে– প্রতি ১ হাজারে ১৮.৫০ টাকা
বিকাশ অ্যাপ এর মাধ্যমে – প্রতি ১ হাজারে ১৭.৫০ টাকা
বিকাশ এটিএম বুথ থেকে– প্রতি ১ হাজারে ১৫.০০ টাকা
Nagad Mobile Banking |
৩. নগদ (Nagad)
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে পরিচালিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হচ্ছে নগদ। এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক ১১ অক্টোবর ২০১৮ সালে এই ডিজিটাল আর্থিক সেবা হিসেবে চালু করা হয় এবং এটি কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে। বর্তমানে নগদ দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় পরিণত হয়েছে তার কিছু অনন্য সেবা, সর্বনিম্ন ক্যাশ আউট চার্জ (৯.৯৯ টাকা) সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। যার ফলে তার বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। সহজ শর্তে নগদ একাউন্ট খোলার সুবিধার কারনে দিন দিন গ্রাহকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগদ একাউন্ট ডায়াল কোড *167#।
নগদ (Nagad) ক্যাশ আউট চার্জ :
অ্যাপ এর মাধ্যমে– ৯.৯৯ টাকা (ভ্যাট সহ ১১.৪৯ টাকা)
ইউএসএসডি এর মাধ্যমে–১২.৯৯ টাকা (ভ্যাট সহ ১৪.৯৪ টাকা)
৪. উপায় (UPay)
এটি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এর একটি Mobile Banking সিস্টেম। উপায় এর পূর্বের নাম হল ইউক্যাশ। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রথম ইউক্যাশ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। চলতি ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে ইউক্যাশ এর নাম পরিবর্তন করে উপায় (UPAY) মোবাইল ব্যাংকিং নামে নতুন করে অ্যাপটি চালু করে। উপায় অ্যাপসে অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মোবাইল ব্যাংকিং এর পাশাপাশি ইউসিবি এর মূল ব্যাংকিং সেবার বেশ কিছু সুবিধা। এছাড়া এটিএম থেকে টাকা উঠানো এবং উপায় হতে টাকা ইউসিবি অথবা অন্য কোন ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানোর সুবিধা পাবেন। এমনকি উপায় এর মাধ্যেমে বিনামূল্যে ক্রেডিট কার্ডের বিলও পরিশোধ করতে পারবেন। উপায় ডায়াল কোড *268#।
উপায় (UPay) ক্যাশ আউট চার্জ:
এজেন্ট এর মাধ্যমে– প্রতি হাজারে ১৪ টাকা
এটিএম বুথ থেকে – ফ্রি
MyCash Mobile Banking |
৫. মাই ক্যাশ (MyCash)
মার্কেন্টাইল ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নাম মাই ক্যাশ (MyCash)। মার্কেন্টাইল ব্যাংক তাদের এই সার্ভিস চালু করে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোর মত এর সাহায্যে সাধারন লেনদেন যায়। এছাড়া মাই ক্যাশ এর সাহায্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক হিসাবে ডিপোজিট করার সুবিধা পাবেন। মাই ক্যাশ ডায়াল কোড *225#।
মাই ক্যাশ (MyCash) ক্যাশ আউট চার্জ: প্রতি ১ হাজারে ১৮.৫০ টাকা।
Ok Wallet Mobile Banking |
৬. ওকে (OK)
এটি ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এর তার গ্রাহকদের জন্য একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ৩০শে অক্টোবর ২০১৩ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। ওকে (OK) সেবার সাহায্যে টাকা জমা ও উঠানো, কিউআর কোডের মাধ্যমে দোকানে পণ্য ক্রয়, ইউটিলিটি বিল দেওয়া, টাকা পাঠানো-গ্রহণ, মোবাইল রিচার্জ, রেমিটেন্স গ্রহণ, ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম, বেতন দেওয়া এবং ই-কমার্স পেমেন্ট ইত্যাদি সুবিধা গ্রহন করা যায়। ওকে (OK) ডায়াল কোড *269#
ওকে (OK) ক্যাশ আউট চার্জ :
ইউএসএসডি এর মাধ্যমে– প্রতি ১ হাজারে ১৮.০০ টাকা
মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে– প্রতি ১ হাজারে ১৭.০০ টাকা
এটিএম বুথ থেকে– প্রতি ১ হাজারে ১০.০০ টাকা
৭. টি ক্যাশ (TCash)/ ট্যাপ (tap)
২০১০ সালে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ‘ট্রাস্ট ব্যাংক মোবাইল মানি’ নামে একটি সেবা চালু করে। তবে তাতে তারা সফল হয়নি। পরবর্তীতে তারা ২০১৮ সালে টি-ক্যাশ নামে আরেকটি অ্যাপ উদ্বোদন করে। বর্তমানে তারা ২৮ জুলাই ২০২১ তারিখে ট্রাস্ট আজিয়াটা পে বা ‘ট্যাপ’ (tap) নামে আরো একটি নতুন অ্যাপ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য উদ্বোধন করেন। ট্যাপ চালু হওয়ার পর টিক্যাশ গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্যাপের গ্রাহক হয়ে যাবে এবং টিক্যাশের এজেন্টরা ট্যাপের এজেন্ট হয়ে যাবে। টি ক্যাশ এর ডায়াল কোড *201#।
টি ক্যাশ (TCash)/ ট্যাপ (tap) ক্যাশ আউট চার্জঃ
এজেন্ট এর মাধ্যমে- প্রতি ১ হাজারে ১৮.০০ টাকা
mCash Mobile Banking |
৮. এমক্যাশ (MCash)
এটি ইসলামী ব্যাংক এর একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। তারা এ সার্ভিস শুরু করে ২০১৯ সালে। এই সেবাটি এম ক্যাশ অ্যাপের পাশাপাশি সেলফিন অ্যাপের সাহায্যেও নেওয়া যায়। শরীয়া সম্মত ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহনকারীরা এটি ব্যবহার করতে পারেন। এমক্যাশ ডায়াল কোড *259#।
এমক্যাশ (MCash) ক্যাশ আউট চার্জঃ
এজেন্ট পয়েন্ট এর মাধ্যমে– প্রতি ১ হাজারে ১৮.০০ টাকা
এটিএম বুথ থেকে– প্রতি ১ হাজারে ১০.০০ টাকা
SureCash Mobile Banking |
৯. শিওরক্যাশ (SureCash)
শিওর ক্যাশ নির্দিষ্ট কোন একটি ব্যাংকের অধীনে নয় বরং চারটি ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত। তাই উপরের সব ক’টি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হতে এটি কিছুটা ব্যতিক্রমী। শিওর ক্যাশের সাথে যুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রধান হলো রূপালী ব্যাংক। যা একটি সরকারী ব্যাংক। বাকী ৩টি হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংক। ২০১৮ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়। শিওর ক্যাশ অ্যাপ ফিনটেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের বেশ উন্নত মানের সেবা দিয়ে থাকে। বর্তমানে এর গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। শিওর ক্যাশ (SureCash) ডায়াল কোড *495#।
শিওরক্যাশ (SureCash) ক্যাশ-আউট চার্জঃ প্রতি ১ হাজারে ১৮.০০ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
২০১০ থেকে ২০২১ এই সময়ে গ্রাম হতে শহরাঞ্চল সকল মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে এ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। বাণিজ্যিক ব্যাংকিং সেবার আওতা বাইরে থাকা কয়েক কোটি মানুষ এই সহজ ডিজিটাল লেনদেন সেবার প্রধান গ্রাহক। সমগ্র বিশ্বে মোবাইল লেনদেনের মধ্যে ৮ শতাংশ সংগঠিত হয় বাংলাদেশে। যার জন্য পুরো বিশ্বে মোবাইল ব্যাংকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে বলে ধারনা করা হয়। এ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা |
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা
- খুব সহজে একাউন্ট ওপেন করা যায়।
- ইন্টারনেট এর সাহায্যে অথবা ইন্টারনেট এর সুবিধা নাই এমন জায়গাতে শুধুমাত্র এসএমএস এবং Phone Call এর মাধ্যমে এ সেবা নেওয়া যায়।
- ২৪ ঘণ্টা, ৩৬৫ দিন একাউন্টে লগইন করার সুবিধা। গ্রাহক চাইলে যেকোনো মুহূর্তে একাউন্টে লগইন করতে পারবে।
- ব্যাংক উপস্থিত না হয়ে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ। যেমন– বিদ্যুৎ, গ্যাস, ফোন, পানি, ইন্টারনেট, ডিটিএইচ বিল ইত্যাদি পরিশোধ করা যায়।
- একাউন্টে জমা টাকা যেকোনো সময় এজেন্ট বা এটিএম বুথ উভয় হতে সহজে উত্তোলন করা যায়।
- যে কোন সময় নিজের ও অন্যের মোবাইল ফোন রিচার্জ করা যায়।
- এক একাউন্ট হতে অন্য একাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। তবে এ সুবিধা এখনও একই ব্যাংক একাউন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
- অনলাইন শপিং এ পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যায়।
- অনলাইন টিকেট (ট্রেনের টিকিট, ফ্লাইট টিকেট) বুকিং করা যায়।
- বৈদেশিক রেমিট্যান্স গ্রহণ করা যায়।
- যে কোন সময় একাউন্টের ব্যালেন্স ও লেনদেন এর স্টেটম্যান্ট দেখার সুবিধা পাওয়া যায়।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অসুবিধাঃ
- প্রান্তিক জনগণ সুবিধাভোগী হওয়ায় প্রতারণার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- সার্বিক বিবেচনায় ক্যাশ আউট চার্জ অনেক বেশি।
- সাধারন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং এর পূর্নাঙ্গ সেবা পাওয়া যায় না। এজন্য একটি স্মার্টফোন থাকা ব্যবহারকারী বেশী সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের খরচ বেশি (বিকাশের ক্ষেত্রে)
- গ্রামীন এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যায় লেনদেন ব্যাঘাট ঘটতে পারে।
- মোবাইল হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যবসা
মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা বলতে কোন একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করাকে বুঝায়। ব্যবসা হিসেবে বর্তমানে এটি একটি বেশ ভাল উপায়। অনেক বেকার যুবক এ সকল মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সমূহের সাহায্যে কর্মসংস্থান করতে পেরেছে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠিত দোকানদারও মূল দোকানের পাশাপাশি এজেন্টের কাজও করেন। কারণ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায় লেনদেন এর ভিত্তিতে যথেষ্টে লাভ রয়েছে। এর কাজ গুলো করতে তেমন কিছু জানতে হয় না। এক দুই দিনের মধ্যে যে কেউ সহজে এ সকল খুটিনাটি শিখতে পারবে। মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করার জন্য খুব বেশি মূলধনেরও প্রয়োজন নেই। অল্প পুঁজিতে আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যেই শুরু করতে পারা যায় এ এজেন্ট ব্যবসা। তবে ব্যবসা এলাকার উপর ব্যয় বাড়তে বা কমতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিকাশ এর এজেন্ট।
অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর পার্থক্য
আমাদের দেশের জনমনে অনলাইন ব্যাংকিং বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে এখনও স্বচ্ছ ধারনা নেই। সেজন্য অনেকে অনলাইন ব্যাংকিং-কে মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে গুলিয়ে ফেলে। অনলাইন ব্যাংকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর সাহায্যে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা আপনাদের কাছে পরিষ্কার হবে।
- মোবাইল ব্যাংকিং-এ শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে হয়।
- অপরপক্ষে অনলাইন ব্যাংকিং-এ মূল ব্যাংক একাউন্ট প্রয়োজন।
- মোবাইল ব্যাংকিং মোবাইলের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই কাজ সম্পন্ন করা যায়।
- অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারের জন্য অবশ্যই ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকতে হবে।
- মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোবাইল নম্বর ও ৪-৫ সংখ্যার পিন নম্বর দিয়ে লগ ইন করতে হয়।
- অনলাইন ব্যাংকে একাউন্ট নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হয়।
- মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যে কোন মুহূর্তে যে কোন জায়গায় টাকা প্রেরন করা যায়।
- অনলাইন ব্যাংকে যে কোন স্থানে টাকা পাঠানো যায় কিন্তু তার আগে গ্রহনকারীর একাউন্ট নম্বর এ্যড করে নিতে হয়।
- অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং এর যেকোনো মুহূর্তে টাকা টান্সফার করা যায়।
- মোবাইল ব্যাংকিং থেকে অনলাইন ব্যাংকিং এ টাকা পাঠানো সহজ নয়।
- অনলাইন ব্যাংকিংয়ে লেনদেন এর পরিমাণ বেশি।
- মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন এর পরিমাণ সীমিত।
- মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্টে টাকা ঢোকাতে/উত্তোলন করতে এজেন্ট অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষ লাগে।
- অনলাইন ব্যাংকিংয়ে তার প্রয়োজন হয়না।
আরো পড়ুন...
শেষকথা
বর্তমানে দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারনে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমন রোধ এর জন্য নগদ টাকার ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে অনলাইনে লেনদেন এর অন্যতম মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবহার বেড়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা সমূহ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই আগামীর সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এখন থেকে এসব সেবার সাথে সকলের পরিচিত হওয়া উচিত।